সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক: ১৯৭৩ সাল। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচন শেষে মন্ত্রিসভা গঠন শেষ হয়েছে। শুরুতে ১০ এপ্রিল সংসদ অধিবেশন শুরু হবে বলে জানানো হয়। পরে এদিনে জানানো হয়, অধিবেশন বসবে ৭ এপ্রিল থেকে। এদিকে দেশে তখন জোরেশোরে চলছে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান।
রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল নবনির্বাচিত জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহ্বান করেন। সেইদিন দশটায় সংসদ ভবনের অধিবেশন শুরু হবে। নয়া সংবিধান মোতাবেক ৭ মার্চে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর এটাই হবে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন।
এইদিনে সংসদের অধিবেশন আহ্বান করা হলেও সংসদের আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হবে। ১০ এপ্রিল বিকালে সংসদে ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি। বাসস প্রতিনিধির কাছে আইন ও পারলামেন্টারি দফতরের মন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর বলেন, সংসদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালিত হবে ৯ এপ্রিল। এরপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ১০ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন।
১৯৭৩ সালের ২৫ মার্চের পত্রিকা
১৯৭৩ সালের ২৫ মার্চের পত্রিকা
শপথ গ্রহণের পর নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদে আনুষ্ঠানিক ভাষণ দেবেন। ১০ এপ্রিলের তাৎপর্য সম্পর্কে মনোরঞ্জন ধর বলেন, দিনটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুজিবনগরে বাংলাদেশ বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়। জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন অল্প সময় স্থায়ী হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ-মিসর পররাষ্ট্র দফতরের যৌথ বিবৃতি
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে এইদিন যৌথবিবৃতি প্রদান করা হয়। এই যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপমহাদেশে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের এবং সকল অমীমাংসিত বিষয়ের শান্তিপূর্ণ মীমাংসা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। উপমহাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তিনি বলেন, সার্বভৌমত্ব, সমতা, পারস্পরিক মর্যাদা এবং অপরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ হতে বিরত থাকার নীতির ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের সকল অমীমাংসিত বিরোধের সমাধান করতে হবে। মিসরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান আল জায়াতের বাংলাদেশ সফর শেষে এই যুক্ত বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হোসেন পাকিস্তানে জোরপূর্বক আটক বাঙালিদের শোচনীয় অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান থেকে সকল বাঙালির ও বাংলাদেশ থেকে সকল পাকিস্তানির শর্তহীন প্রত্যর্পণের প্রস্তাব দেন।
১৯৭৩ সালের ২৫ মার্চের পত্রিকা
১৯৭৩ সালের ২৫ মার্চের পত্রিকা
জেনেভা চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিরা আটক
পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীরা জেনেভা চুক্তির অধীনে আটক রয়েছে বলে ভারতীয় ও বাংলাদেশ দূতাবাস বিবৃতিতে উল্লেখ করে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এক বিবৃতিতে বলেন, জেনেভা চুক্তি অনুযায়ী যুদ্ধে লিপ্ত দেশগুলোর মধ্যে বিরোধের অবসান না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত ও প্রত্যর্পণ উচিত নয়। বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান বাংলাদেশের প্রতি চরম বিরুদ্ধ মনোভাব বজায় রেখেছে। ভারতীয় দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতার উপায় বের করার পরিবর্তে পাকিস্তান উপমহাদেশে এই আশঙ্কা বজায় রেখেছে।
মজুদ খাদ্য ও অস্ত্র উদ্ধার
পুলিশের দুর্নীতি দমন বিভাগ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ মজুদ করা খাদ্যশস্য ও দখলকৃত অস্ত্র উদ্ধার করেছে। প্রধানমন্ত্রীর পরিদর্শন দলের মহাপরিচালক এদিন জানান, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনসাধারণ অস্ত্র মজুদ খাদ্যশস্যসহ অন্যান্য জিনিসপত্র এবং দখলকৃত বাড়িঘর ও অন্যান্য বেআইনি কার্যকলাপ সম্পর্কে কন্ট্রোল রুমে খবর দিয়েছেন।
পুলিশ দফতর থেকে এদিন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আরও অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের খবর দেওয়া হয়। ঢাকার কোতোয়ালি থানার মালিটোলার একটি গর্ত থেকে তিনটি ৩০৩ রাইফেল, একটি ভাঙা রাইফেল, একটি স্টেনগান, একটি এলএমজি নলসহ বেশকিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
সিলেট৭১নিউজ/টিজা